প্রকাশ: ২০১৮-০৬-০৬ ১২:৩৪:৪৩ || আপডেট: ২০১৮-০৬-০৬ ১২:৩৪:৪৩
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান: দেশের অন্যতম নিজস্ব নদী মাতামুহুরীর পাড় ঘেঁষে আলীকদম উপজেলা। আলীর গুহাসহ বেশ কয়েকটি অনাবিষ্কৃত পর্যটন স্পট রয়েছে এখানে। মাতামুহুরী নদীপথে কুরুকপাতা ও পোয়ামুহুরী হয়ে চলে যাওয়া যায় মিয়ানমারের কালিন্দী সাগর পর্যন্ত।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু পাহাড়ি ঝর্না, পর্যটন স্পট আবিষ্কার এবং আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণ হওয়ায় দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক আসেন প্রান্তিক এই উপজেলায়। এদিকে নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে চলছে আলীকদম-জানালিপাড়া-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়কের। এর ফলে ৬০ কিলোমিটারেরও বেশি নদী পথ পেরিয়ে অথবা মাত্র ৩৬ কিলোমিটার সড়ক পথ বেয়ে প্রকৃতির অপার নিদর্শন পোয়ামুহুরী যাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক পথ আলীকদম-থানচি সড়কের প্রায় মাঝামাঝি পয়েন্টে সুউচ্চ ডিম পাহাড়। হাজার বছরের বিস্ময়কর ঐতিহাসিক নিদর্শন আলীর সুড়ঙ্গ, সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কৃত হয়েছে দামতোয়া ঝর্না, রূপমুহুরী ঝর্না, নুনার ঝিরি ঝর্না এবং তামংঝিরি জলপ্রপাত। এর বাইরে রংরং এবং মেরাহইতং পাহাড় তো আছেই। কিন্তু এতো এতো পর্যটন সম্ভাবনাময় আলীকদমে নেই কোনো বেসরকারি হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট। উপজেলা পর্যায়ের গেস্টহাউসগুলোও এখন ব্যবহার হচ্ছে অন্য কাজে। তাই এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অবকাশ যাপনের কোনো উপায় ছিল না এতদিন।
এমন একটা পরিস্থিতিতে আলীকদমে প্রকৃতিবান্ধব ইকো ট্যুরিজমের সম্ভাবনা জাগিয়ে দিলেন স্থানীয় কজন সাংবাদিক। কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে দ্রুত সমাপ্তির পথে তাদের স্বপ্নের অবকাশ কেন্দ্র ‘শৈল কুটির।’
আলীকদম উপজেলা সদর থেকে দেড় কিলোমিটার সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশার পথ পেরিয়ে বন বনানীর ভেতর দিয়ে সহজেই যাওয়া যায় শৈল কুঠিরে।
একপাশে কলকল বয়ে যাচ্ছে স্রোতস্বিনী পাহাড়ি নদী মাতামুহুরী, এপাড়ে-ওপাড়ে উঁচু উঁচু পাহাড় এবং বৃক্ষরাজির ভেতরে ভেতরে বাঁশ-বেত-কাঠসহ নানা প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে রিভার ভিউ রেস্টুরেন্ট, কটেজ, ওয়াকওয়ে, শিশু বিনোদন কেন্দ্র, লেক এবং লেকের উপর ভাসমান কটেজ।
নায়াপাড়া এলাকায় মারমা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ওয়াইহ্লা কার্বারিপাড়া ও বাঙালি বসতি বণিকপাড়ার মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত হবার কারণে উদ্যোক্তারা আশা করছেন, শৈল কুটির রিসোর্টে অবস্থান করে পাহাড়ি-বাঙালি দু’টি জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন খুব কাছ থেকেই দেখা যাবে।
রিসোর্টের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা হয় শৈল কুটির রিসোর্টের অন্যতম উদ্যোক্তা আলীকদমের সাংবাদিক মমতাজ উদ্দিন আহমদের সাথে।
তিনি জানান, প্রায় আড়াই একর ভূমির উপর রিসোর্টটির নির্মাণ কাজ এখন প্রায় শেষের দিকে।
তিনি আশা করছেন, রমজানের ঈদের আগেই পর্যটকদের অবকাশের জন্যে ‘শৈল কুটির’ খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।
মমতাজ উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে রেস্টুরেন্ট, ৩টি কটেজ, কাঠের ওয়াকওয়ে, কাঠের ব্রিজ, বৃক্ষবেষ্টিত ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ‘ফিনিশিং টাচ’ চলছে।
শৈল কুটির রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল-ফয়সল বিকাশও একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।
তিনি জানান, অবকাশ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক ওয়াইফাই সংযুক্ত ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। থাকবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
আল-ফয়সল বিকাশ জানান, পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে চায়নিজ ও বাংলাদেশি খাবারের সাথে রাখা হবে স্থানীয় খাবার-দাবারও।
কীভাবে যাবেন : ঢাকা, চট্টগ্রাম বা দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে শৈল কুটিরে আসতে হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া পয়েন্টে নামতে হবে। সেখান থেকে বাস অথব জিপে চলে আসতে হবে আলীকদম বাসস্টেশনে। সেখান থেকে রিকশা অথবা অটোরিকশা নিয়ে নয়াপাড়ায় পৌঁছুলেই শৈল কুটির রিসোর্ট আপনাকে স্বাগত জানাবে।
অন্যদিকে বান্দরবান জেলা সদর থেকে থানচি পৌঁছে সেখান থেকে ভাড়ায়চালিত গাড়ি বা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক পথ বেয়ে সোজা আলীকদম বাজার। সেখান থেকেও রিকশা বা অটোরিকশা কিংবা প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে রিসোর্টে যাওয়া যায়। আলীকদম বাসস্টেশন অথবা বাজার থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরেই এ রিসোর্টের অবস্থান।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে বা গ্রুপ ট্যুরে আসা পর্যটকদের শতভাগ নিরাপত্তা দেয়া হবে শৈল কুটির রিসোর্টে।