প্রকাশ: ২০১৮-০৬-১২ ২১:০৯:৫৭ || আপডেট: ২০১৮-০৬-১২ ২১:০৯:৫৭
চরম ভোগান্তিতে নদীপাড়ের মানুষ পানিতে ডুবে বাড়ী-ঘর ছাড়া ঈদ আনন্দের স্থলে কষ্টের ছায়া
পরিবার নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে দিন যাপন অর্ধহারে-অনাহারে কাটছে সময়।
আল-মামুন: টানা বর্ষণে রাঙামাটিতে নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড়ধসে ১০ জন নিহত হয়েছেন। খাগড়াছড়িতে টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বন্যা পরিস্থিতি। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থতদের ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে পড়েছে।
নিহতদের মধ্যে আটজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন, উপজেলার বড়পোল পাড়ার সুরেন্দ্র লাল চাকমা (৫৫), তার স্ত্রী রাজ্য দেবী চাকমা (৫০), মেয়ে সোনালী চাকমা (১৩) ও রোমেন চাকমা (১৪)। এছাড়া ধরমপাশা কার্বারিপাড়ার ফুলজীবী চাকমা (৫৫), ইতি দেওয়ান (১৯), স্মৃতি চাকমা (২৩), তার ছেলে আইয়ুব দেওয়ান (দেড় মাস)। তবে অন্য দুজনের পরিচিয় জানা যায়নি। নিখোঁজ রয়েছেন বেশ কয়েকজন। এরইমধ্যে অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একে এম মামুনুর রশিদ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পাহাড় ধসে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় দুর্গত এলাকায় পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে। এতে হতাহত ও নিখোঁজের তথ্য পেতে সময় লাগছে। নিহতদের মধ্যে উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের ধরমপাশা কার্বারিপাড়ায় একই পরিবারের চারজন, নানিয়ারচর ইউনিয়নের বড়পোল পাড়ায় চারজন ও হাতিমারায় দু’জন বলে জানা গেছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পাহাড়ধসের এ প্রাঁণহানী ঘটে।
নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুলাহ আল মামুন তালুকদার জানান, পাহাড়ধসের পর থেকেই ঘটনাস্থলে পুলিশ ও দমকল বাহিনী উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। পাহাড় ধসে গত বছর ১৩ জুন রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে পাঁচ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যু ঘটনা ঘটে।
এদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের অধিকাংশ এলাকা। বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস, সড়ক যোগযযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যায় জেলায় অন্তত ৫ হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
চরম দূভোগে পড়েছে চেঙ্গী,মেইনী ও ফেনী নদীসহ খাগড়াছড়ি জেলা সদর ছাড়াও পুরো জেলা বিভিন্ন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। ক্ষতিগ্রস্থদের কাছে ঈদের আনন্দ এখন শুধুই স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলায় ২০টির অধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে চেঙ্গীপাড়ের আশপাশের ঘরবাড়ী, পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। খাগড়াছড়ি জেলা শহরের মুসলিমপাড়া, শান্তিনগর, আরামবাগ, গঞ্জপাড়া, অপর্ণা চৌধুরীপাড়া, বটতলী, ফুটবিল, বাস টার্মিনাল, মেহেদীবাগ, সবজি বাজার, মিলনপুর, মাস্টার পাড়া, আপার পেড়াছড়া সহ নদীপাড়ের গ্রামের মানুষ চরমদশার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
টানা বৃষ্টিপাত আর ভারী বর্ষণে খাগড়াছড়ির বিপর্যস্ত মানুষদের উদ্ধারে বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার মাঠে নেমেছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও পর্যাপ্ত সাপোট না থাকায় না ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্থদের পাশে দাড়িয়ে সাহার্য্যরে হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী। জেলা প্রশাসন,পৌর সভার পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পনিবন্দি পরিবারগুলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকানের ব্যপক মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বন্যা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ ও স্মরণকালের বড় ধরণের বন্যা বলে দাবী করেছে স্থানীয়রা।
বন্যা প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছে খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকুল আলম,খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য আ: জব্বার,খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসসহ জনপ্রতিনিধিরা। এছড়াও বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার খবর পাওয়া গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খাগড়াছড়ির গঞ্জপাড়ায় ১ শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন এলাকায় নিখোঁজ,মৃত্যুর সংখ্যা ও ক্ষয়-ক্ষতির সংখ্যা আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সড়ে যেতে মাইকিং করছে প্রশাসন। এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক রাশেদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আলী আহম্মদ খান, খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র মো: রফিকুল আলমসহ জনপ্রতিনিধিরা দূর্গত এলাকা পরিদর্শণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহার্যের আশ্বাস দিয়েছে বলে জানা গেছে।
খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র মো: রফিকুল আলম বলেন, ঈদের আগ মুহুত্বে প্রাকৃতি বিপর্যয় আমাদের জন্য বড় ধরণের কষ্টের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। তারপরও মনোবল হারালে চলবে না। শক্তমন বল দিয়ে সকল বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সমাজের সকলকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান। খাগড়াছড়ি পৌর সভার পক্ষ থেকে (মঙ্গলবার) প্রাথমিক ভাবে ৮ হাজার পরিবারের জন্য খাদ্য সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়াও ১২টি আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে এবং সেখানে পৌর সভার পক্ষ থেকে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে বলে মেয়র জানান।
শুধু খাগড়াছড়িতেই নয় এদিকে গত চারদিন ধরে ভারী বৃষ্টি বর্ষণের তলিয়ে গেছে মেরুং বাজার। এদিকে সড়কে পানি ওঠায় খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়ক ও দীঘিনালা-লংগদু সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে বেশ কিছু কাচা ঘর-বাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ ইউনিয়নের মুসলিম ব্লক এলাকার মৎস্য চাষী কামাল ফকির, ভাসাইন্যাদম ইউনিয়নের রাঙ্গাপানি এলাকার মৎস্য চাষী মো: মোনাফ ও আমতলী পাড়ার মৎস্য চাষী মোঃ শুক্কুর আলী এর তিনটি মৎস্য বাধ ভেঙ্গে গেছে। এতে প্রায় আট লক্ষ টাকা ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। মৎস্য চাষীরা জানায়, ঈদের আগে তাদের মাছ ধরে বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু অভিরাম বৃষ্টিপাতের কারেণে তা করতে পারেনি।