খাগড়াছড়ি, , বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাহাড়ে আগাম কাঁঠালে বাজার সয়লাব: দাম বেশি, ফলন কম

প্রকাশ: ২০২৩-০৫-১০ ১০:৫৫:০৪ || আপডেট: ২০২৩-০৫-১০ ১০:৫৫:১০

মো: আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি।।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গায় মৌসুম শুরুর আগেই আগাম কাঁঠালে বাজার সয়লাব। সিজনের আগে আসে বিধায় ফলের রাজা খ্যাত এ ফলের কদর খুব বেশি।

মাটিরাঙ্গায় ম-ম গন্ধ ছড়াচ্ছে আম, কাঁঠাল ও লিচু। বাহারি ফলে ঠাসা মাটিরাঙ্গা বাজার। আর এসব ফলের মধ্যে সবথেকে বড় জায়গা দখল করেছে কাঁঠাল। খাগড়াছড়িতে সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট বসে মাটিরাঙ্গায়। মৌসুমী সব ধরনের ফলের একটা কদর বরাবরই থাকে। তবে যদি সে ফল মৌসুমের আগেই পাওয়া যায় তাহলে চাহিদা তার একটু বেশিই থাকে। পাশাপাশি সবার আগ্রহ থাকে বেশ। ইতোমধ্যে মাটিরাঙ্গা বাজারে জমে উঠেছে আগাম কাঁঠালের হাট। সপ্তাহের শনিবার হাটবার হলেও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদসহ আশপাশের বিভিন্ন লোকালয় থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা কাঁঠাল নিয়ে আসতে শুরু করেন মাটিরাঙ্গা কাঁঠাল বাজারে। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার এ দুই দিন মাটিরাঙ্গায় বিশাল এলাকা জুড়ে বসে কাঁঠালের হাট। 

স্থানীয়ভা‌বে উৎপা‌দিত কাঁঠাল, কলা, আনারস, বেল, তেতুল, পেঁপেঁসহ বাহা‌রি ধর‌নের ফল এলাকার চাহিদা মি‌টি‌য়ে দে‌শের বি‌ভিন্ন এলাকায় রপ্তা‌নি হ‌চ্ছে।

বাজার সরেজমিনে দেখা যায়, আগাম কাঁঠালে সয়লাব প্রায় পুরো বাজার। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসব কাঁচা-পাকা কাঁঠাল পরিবহন যোগে এনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দর-কষাকষি করে কিনছেন ব্যবসায়ীরা। দাম চড়া হলেও সাধারণ ক্রেতা ও পাইকাররা ভিড় করছেন বাজারে।পাকা কাঁঠালের চাহিদা থাকলেও পরিবহনের সুবিধার্থে কাঁচার চাহিদাই বেশি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন চটগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, বৃহত্তর নোয়াখালি ও নরসিংদী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই দুই দিনে প্রায় আর্ধশতাধিক কাঁঠাল বোঝাই ট্রাক সমতলে যায়। প্রতি ট্রাকে ২২শত কাঁঠাল থাকে।

এদিকে প্রছন্ড রোদ বিধায় কাঁঠালের রং নষ্ট না হওয়ার জন্য কাঁঠালের উপরে গাছের ঝোঁপঝাড় দেয়া হয়েছে। 

উপজেলা অফিস সূত্রে জানা যায়, মাটিরাঙ্গা উপজেলায় এবার প্রায় ৫শ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ  হয়। ৩৫ মে. টন পার হেক্টর জমিতে কাঁঠালের লক্ষ্যমাত্রা আবার নির্ধারন করা হয়। তবে ক্রমাগত খরার কারণে এ বছর কাঁঠালের উৎপাদন কম বিধায় দাম বেশি হাকাচ্ছেন সকলে। এদিকে তপ্ত গরমের কারণে সিজন আসার আগেই কাঁঠাল, লিচু আম সহ নানা মৌসুমী ফল ইতিমধ্যে পাকতে শুরু করছে। তাই মাটিরাঙ্গা বাজারে প্রতিদিন কাঁঠাল বাদে আম, লিচু বাজারে সয়লাব বলে মনে করছেন কৃষি অফিস। 

স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহাজাহান জানান, আমি পেশাগতভাবে বিভিন্ন ফলের ব্যবসা করি। বাগান ক্রয় করে ক্রমান্বয়ে সুবিধাজনক সময়ে বিক্রি করি। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিটা কাঁঠালের দাম ৩০টাকা খেকে ৪০টাকা বেশি। ৫০টাকার নিচে কোন কাঁঠালে নাই। প্রতি’শ কাঁঠালেন দাম ১৫হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্ছ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

মুসলীম পাড়ার আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কবির জানায়, আমি এবার মাটিরাঙ্গায় ১০লাখ টাকার কাঁঠাল বাগান ক্রয় করেছি। এবার কাঁঠালের দাম বেশি বিধায় লাভবান হবো বলে মনে করছি। তবে বিভিন্ন স্থানে খরছ বেশি বিধায় মনে ভয় কাজ করছে। 

কাঁঠাল বিক্রেতা কবির মিয়া জানান, তবলছড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে আগাম কাঁঠাল বাগান ক্রয় করে থাকি। তবলছড়ি থেকে এক পিকআপ যোগে কাঁঠাল নিয়ে এসেছি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া দাম ভালো হওয়ায় লাভও বেশি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম থেকে আসাব ব্যবসায়ী আরিফ জানান, শহরে পাহাড়ের আগাম কাঁঠালের বেশ চাহিদা থাকায় শখের বসে অনেকে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখেন। মাটিরাঙ্গার কাঁঠাল বেশ সুস্বাদু এবং বিষমুক্ত। তাই এর চাহিদাও বেশি। 

মাটিরাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক মো: কামরুল ইসলাম জানান, এ মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে এ বাজার থেকে কমপক্ষে ৭০/৮০ ট্রাক কাঁঠাল সমতলের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। যা থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় করছে সরকার। এছাড়াও গাড়িতে কাঁঠাল লোড-আনলোডসহ অন্যান্য কাজে অন্তত দেড় শতাধিক শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। তবে মাটিরাঙ্গায় সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার প্রতিষ্ঠা করা গেলে চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফল সংরক্ষণ করে আরও অধিক লাভবান হতেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। 

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মা‌টিরাঙ্গার মা‌টি ও আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় এখা‌নে প্রায় বা‌রো মাসই কাঁঠাল জ‌ন্মে। এখন বাজা‌রে যে সব কাঁঠাল আস‌ছে তা পুরোপুরি প‌রিপক্ক হয়নি। বে‌শি টাকা পাওয়ার আশায় চা‌ষিরা অপ‌রিপক্ক কাঁঠাল ‌বি‌ক্রি ক‌রে‌ দি‌চ্ছে। সাধারণত কাঁঠাল পাকা শুরু করে জুন থেকে, তবে এবার কাঁঠালের ভাল ফলন হওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়ে লাভবান হচ্ছেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.