প্রকাশ: ২০২২-০৯-০৬ ২৩:২৫:৫৩ || আপডেট: ২০২২-০৯-০৬ ২৩:২৫:৫৮
মোহাম্মদ শাহেদ হোসেন রানা, রামগড়: পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে সুনামধন্য দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূয়া সনদ ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সহ উপজেলা কোর্ট মসজিদে ইমাম হিসেবে চাকুরী হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে মাওলানা আবদুস সামাদের বিরুদ্ধে।
সূত্রে জানাগেছে, অভিযুক্ত মো.আবদুস সামাদ রামগড় পৌরসভার ৫নং ওর্য়াড চৌধুরী পাড়ার মৃত আবদুল খালেক এর ছেলে। সে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পুরান রামগড় ইসলামিয়া আজিজুল উলুম (কাজি বাড়ি মাদ্রাসার) সুনামধন্য এই দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদ পত্র জাল করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সহ রামগড় উপজেলা কোর্ট মসজিদের সহকারী ইমাম কাম মুয়াজ্জিন হিসেবে ৪/৫ ধরে চাকুরী করছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি উপজেলার ভূঁজপুর থানাধীন ১নং বাগান বাজার ইউনিয়নের অধিনস্থ পুরান রামগড় ইসলামিয়া আজিজুল উলূম মাদ্রাসা থেকে মেশকাত (উলা) শ্রেণী পাশের ভূয়া সনদ পত্র জালিয়াতির মাধ্যমে সে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও সহকারী ইমাম কাম মুয়াজ্জিন পদে চাকুরি করছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোঃ আবদুস সামাদ পুরান রামগড় ইসলামিয়া আজিজুল উলূম মাদ্রাসায় তাঁর সার্টিফিকেট সন অনুযায়ী মাদ্রাসার ২০১৫ (১৪৩৭ হিজরী) সালের ছাত্র ভর্তি রেজিঃ দৈনিক হাজিরা খাতা এবং সার্টিফিকেট বিতরণের রেজিষ্ট্রারে মেশকাত (উলা) বিভাগে তাঁর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদিকে পুরান রামগড় ইসলামিয়া আজিজুল উলূম (কাজী বাড়ি) মাদ্রাসার প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী ওয়ালি উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়ন পত্র সুত্রে জানা গেছে, মোঃ আবদুস সামাদ, পিতা. মৃত আব্দুল খালেক, মাতা. নাজরীন আক্তার, জন্ম তারিখ ১০/০৭/১৯৯২ ইং, চৌধুরী পাড়া, রামগড় খাগড়াছড়ি, সে বিগত ২০১৫ সালের মেশকাত (উলা) বিভাগ ১৮/১২/২০১৭ইং সাল মূলে ইস্যুকৃত সনদটি পুরান রামগড় ইসলামিয়া আজিজুল উলূম মাদ্রাসা ক্রমিক নং 043 মাদ্রাসার তথ্য যাচাই বাছাইয়ে দেখা যায় যে ২০১৫ সালে এই নামে কোন ছাত্র ভর্তিও করা হয়নি, এবং মেশকাত (উলা) পরীক্ষায়ও অংশ গ্রহন করেননি, ইহাতে প্রতিয়মান হয় যে উক্ত সনদটি সম্পূর্ণ ভূয়া, রামগড় উপজেলা কোর্ট জামে মসজিদের মুসল্লিদের তথ্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই প্রত্যয়ন পত্র ইস্যু করা হয়েছে।
এবিষয়ে, মাদ্রাসার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়ালি উল্লাহ আরো বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাইরে থেকে ভূয়া সার্টিফিকেট বানিয়ে অনেকে বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে, এতে প্রতিষ্ঠানের শুনাম নষ্ট হয়।
রামগড় উপজেলা উলামা ঐক্য পরিষদের নেতৃীবৃন্দ মাওলানা শহিদ উল্লাহ, মাওলানা কাজী মহিব উল্লাহ সহ রামগড় উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মডেল মসজিদ পাঠাগার এর কেয়ারটেকার মাওলানা সাইফুল ইসলাম জানান, মো.আবদুস সামাদ মেশকাত (উলা) বিভাগে পড়াশোনাই করেননি, আর এখন ওনি মেশকাত (উলা) জাল সার্টিফিকেট নিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে আলেম সমাজের শুনাম নষ্ট করতেছে। আবদুস সামাদ, পুরান রামগড় ইসলামিয়া আজিজুল উলূম মাদ্রাসার ছাত্রই ছিলেন না, যা মাদ্রাসার সুত্রে আমরা জানতে পারি। মাদ্রাসায় তাঁর কোন ধরনের তথ্য পাওয়া যায়নি, ভূয়া সার্টিফিকেট ও তথ্য গোপন করে সে রামগড় কোর্ট মসজিদে চাকুরি করে আসছেন, তাঁর ভূয়া সার্টিফিকেটের কারণে মাদ্রাসার সুনাম নষ্ট হচ্ছে, তাকে ভূয়া সার্টিফিকেট ব্যবহারের দায়ে আইনের আওতায় আনা খুবই জুরুরী।
মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লী মাওলানা মোহাম্মদ করিমুল হক জানান, মোঃ আবদুস সামাদ এর সনদের বিষয়ে আমাদের কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ বিভিন্ন মহল থেকে জানতে চাইলে, আমরা মাদ্রাসার ২০১৫ সনের সার্টিফিকেট বিতরণ রেজিঃ যাচাই বাছাই করে দেখি অত্র মাদ্রাসায় তাঁর কোন নাম নেই, সে যদি মাদ্রাসার ছাত্রই হতো তাহলে তাঁর নাম সর্বপ্রথম ভর্তি রেজিষ্ট্রারে থাকতো।
এবিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক ও রামগড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোঃ আব্দুল হক জানান, আবদুস সামাদ নামে কোন ছাত্র ২০১৫ (১৪৩৭ হিজরী) সালে মেশকাত (উলা) বিভাগে ভর্তি হয়নি, আমরা মাদ্রাসার সকল রেজিঃ যাচাই বাছাই করে তাঁর কোন তথ্য খুঁজে পাইনি, যেখানে ভর্তি রেজিষ্ট্রারে ছাত্রের নাম নেই, তাঁহলে সে কিভাবে অত্র মাদ্রাসার ছাত্র হয়। আবদুস সামাদ কোথায় থেকে প্রতিষ্ঠানের নামে ভূয়া সার্টিফিকেট বানিয়েছে সেটি সামাদে বলতে পারেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আবদুস সামাদ নামে কোন ছাত্রকে মেশকাত (উলা) পাশের সার্টিফিকেট প্রদান করেননি। সুনামধন্য দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সনদ জালের অপরাধে সামাদকে দ্রুতই আইনের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে, অভিযুক্ত মোঃ আবদুস সামাদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাল সার্টিফিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন জাল সার্টিফিকেট দিয়ে কি চাকুরী হয়। তিনি জানান রামগড়ের একটি রাজনৈতিক ক্ষমতাশীন ব্যাক্তি তাঁর সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য, মাদ্রসার কর্তৃপক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সার্টিফিকেট বিতরণ বই এবং রেজিষ্ট্রার থেকে তাঁর নাম গায়েব করে ফেলেছে বলে দাবী করেন।
এবিষয়ে, রামগড় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো.আনোয়ার ফারুক জানান, সার্টিফিকেট জাল ও তথ্য গোপন করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা এটা খুবই লজ্জাজনক বিষয় এবং এটা এক ধরনের প্রতারণা।