খাগড়াছড়ি, , বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী খাগড়াছড়ির নারী উদ্যোক্তা নিপু ত্রিপুরা

প্রকাশ: ২০২১-০৬-১৫ ১৯:৪৪:০৯ || আপডেট: ২০২১-০৬-১৫ ১৯:৪৪:১৭

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়িতে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা নিপু ত্রিপুরা। খাগড়াছড়ি শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ঠাকুরছড়া নতুন বাজার এলাকায় নিপুর বাড়ি। নিপুর রয়েছে ১ স্বামী ২ সন্তান। ২০০৪ সালে যশু ত্রিপুরার সাথে সংসার জীবন শুরু করেন নিপু। গৃহিনী হয়ে ঘরে বসে না থেকে একজন নারী উদ্যোক্তা হয়ে নিজের সংসারের উন্নতি ও কিছু হতদরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান তৈরী করার ইচ্ছা ছিলো তাঁর। নিপু তার স্বামীর সাথে পরামর্শ করে মাশরুম চাষ করবো সিন্ধান্ত নেন।

প্রথমে তিনি খাগড়াছড়ি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাশরুম প্রশিক্ষক সুদর্শন চাকমা থেকে পরামর্শ নিয়ে ১৪ মাস আগে মাশরুম চাষ শুরু করেন। নিপু ত্রিপুরা বলেন, মাশরুম চাষ চলাকালীন আমার এমন সময় গেছে তার স্বপ্ন বুননে শীতের সময়ে দিন রাত জেগে কাজ করেছিল। তিনি জানান মাশরুম চাষ অন্ত্যান্ত লাভ জনক একটি চাষ। বাম্পার ফলন হওয়ার পর এ চাষের আগ্রহ বেড়ে যায় তার। এই ভাবে কয়েক মাস চলাকালীন গড়ে তোলেছে আন্তকর্মসংস্থান। নিপু দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষে ঠাকুরছড়া নতুন বাজায় এলাকায় কর্মহীন ও স্বামীহীন ৫ জন নারীকে তার প্রতিষ্ঠানে মাসিক বেতনে কর্মসংস্থান সুযোগ করে দিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানে ২ মাসে প্রায় দেড় থেকে ২ টন মাশরুম উৎপাদন হয় বলে জানান। তার দেখাদেখি এলাকায় প্রায় প্রতিটি ঘরের মধ্যে মাশরুম চাষ শুর করেছে প্রতিবেশীরা। তার উৎপাদিত মাশরুম এখন বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে।

নিপু মাশরুম ঘর প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী বিনতা ত্রিপুরা বলেন, আগে আমি মানুষের এখানে কাজ করি কিন্তু ১ সাপ্তাহে ২ থেকে ৩ কাজ পায়, বাঁকী দিন কাজকাম নাই, অভাবে দিন যায়। নিপুর এখানে আমি মাসে ৩০ দিনে ৩০ দিন কাজ পায়, আমি অনেক সুখে আছি।

আপন বালা ত্রিপুরা বলেন, আমার মেয়ে কলেজে পড়ে তার খরচ দিতে হয় একদিকে আমার স্বামী নাই, নিপু মাশরুম ঘর হওয়াতে আমি এখন তাঁর প্রতিষ্ঠানে মাসিক হিসাবে কাজ করি, মাস শেষ হলে টাকা পায়, আগের চাইতে অনেক সুখে আছে।

নিপু ত্রিপুরা জানান, তার নিপু মাশরুম ঘর প্রতিষ্ঠানে ৪ ধরণে মাশরুম আছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ভাবে পিও-২, পিও-১০, (সাদা জাতের) মাশরুম এবং পিএসসি (ছাই রঙের) এবং ঋষি মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। সামান্য জায়গাতে মাশরুম চাষ করা যায় । খড়ের বেডে মাশরুম চাষ সাধারণত ৩ ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফসল উৎপাদনের জন্য চাষঘরে ২১ দিন থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই মাশরুম পাওয়া যায়।

নিপু অভিযোগ তোলে বলেন বীজের অভাবে অনেকেই মাশরুম চাষ বৃদ্ধি করতে পারছেন না। প্রথম প্রথম মাশরুচাষ শুরু করেছি তার চাহিদা অনুযায়ী মাশরুম বীজ পাওয়া যায় না খাগড়াছড়িতে, ফলন উৎপাদনের জন্য বীজ রাঙামাটি, ঢাকা সাভার থেকে আনাও হয়েছে। বীজের ঘাটটি দেখার ফলে তিনি বীজ উৎপাদনের জন্য মাগুরায় বাবুল আকতার পরিচালিত (ড্রিম মাশরুম সেন্টার ) প্রতিষ্ঠানে, সুদর্শন চাকমা এবং সুমন চাকমার থেকে বীজ উৎপাদন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে বীজের জন্য আর কোথাও যাওয়া লাগছে না নিজেই বীজ উৎপাদন করি, এবং মাশরুম বীজ ক্রয় করি ২ মাস ধরে।

খাগড়াছড়ি কৃষি অধিদপ্তর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ পরিচালক কিশোর কুমার ম মঞ্জুমদার বলেন, মানুষের মাঝে মাশরুম সবজি এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । এখান কার রেস্টুরেন্টে অথবা হোটেল গুলোতে মাশরুম পাওয়া যায় এবং চাহিদা থাকে বেশী। খাগড়াছড়ি জেলার অধীনে অনেকে মাশরুম চাষ করে । তবে এবারে নিজ উদ্যোগ নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেছে এক নারী উদ্যোক্তা নিপু ত্রিপুরা। তার প্রতিষ্ঠানে নারীদেরকে কর্মসংস্থান সুযোগ করে দিয়েছে। উৎপাদিত মাশরুম বাজারে অনেক টা চাহিদা পূরণ করছে। নিপু ত্রিপুরার মাশরুম বীজ উৎপাদন করছে তার প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ নিয়ে অনেকে মাশরুম চাষ শুরু করেছে এখানকার মাশরুম চাষে আগ্রহীরা। তিনি বলেন, নিপু ত্রিপুরা সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে ওনাকে সরকারি ভাবে কিভাবে সহযোগিতা করে আরো প্রতিষ্ঠা করা যায় সেই প্রচেষ্টা আছে বলে জানান। তিনি আরো বলেন আশাব্যক্ত করছি একদিন এই জেলার মাশরুম চাষ উদ্যোগতা বৃদ্ধি হবে খাগড়াছড়ি জেলা চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায়ও সরবরাহ করতে সম্ভব হবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.