খাগড়াছড়ি, , বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

পাহাড়ে আগে-বাগে আম গাছে মুকুলে ছেয়ে গেছে বাম্পার ফলনের আশা

প্রকাশ: ২০২৩-০২-০৬ ১৭:৩১:৩২ || আপডেট: ২০২৩-০২-০৬ ১৭:৩৩:৫০

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ প্রকৃতিতে এখনো ফাল্গুন আসেনি। অথচ এরই মধ্যে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার আম বাগানগুলোতে গাছে গাছে ফুটেছে মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। আর এই মিষ্টি গন্ধ মানুষের মনকে বিমোহিত করে মধুমাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে। সেই সাথে এইসব বাগানগুলোতে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মালিকরা।

খাগড়াছড়ির রসালো আম্রপালি, বারিফোর, রাংগাই, মাহালিশা, কিউজাই ও বারোমাসি কাটিমন আমের স্বাদ দেশ-বিদেশে পরিচিত পেয়েছে অনেক আগেই। ফলে এই অঞ্চলের তৃণমূলেও বাগ-বাগান সম্প্রসারণ হয় ব্যাপক। জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৪৩০ হেক্টর টিলায় সৃজিত বাগানে আম উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৬০০০ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে অনেকটা আগে-বাগেই মিষ্টান্ন আম্রপালি গাছে মুকুলে ছেয়ে গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২০% ফলন বেশি হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন বাগান মালিক ও কৃষিবিদেরা।

কৃষি অফিস ও বাগান মালিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৩০ হেক্টর টিলায় বাহারী ও রসালো আম্রপালি, বারিফোর, রাংগাই, মাহালিশা, কিউজাই ও বারোমাসি কাটিমন আম চাষ করেছেন অন্তত ছোট-বড় শতাধিক বাগান মালিক। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাগান সৃজন করেছেন বাটনাতলী ইউনিয়নের চেম্প্রুপাড়ার মো. আবু তাহের। তিনি জানান, ২০১১ সালে ১২০০ আম্রপালি চারা রোপনের মধ্য দিয়ে আম বাগান সৃজন শুরু করেন। যা ২০১৫ সালে উৎপাদনে ১৮ লাখ টাকার আম বিক্রি দিয়ে যাত্রা শুরু। বর্তমানে ২৭ একর জায়গাজুড়ে ২২০০ আম্রপালি, ১৬০০ বারিফোর ও রাংগই, ১২০০, বারিফোর, মাহালিশা, কিউজাই জাতের আম রয়েছে। ২০২২ সালে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা স্বত্ত্বেও ৫০ লাখ টাকার আম বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৬০-৬৫ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছেন মো. আবু তাহের। এছাড়াও উপজেলার বড় আম বাগানের তালিকায় হাতিমুড়ায় মো. আবদুর রশিদ, ডাইনছড়িতে মো. ইয়াকুব আলী, চেঙ্গুছড়ায় হাসান গার্ডেন, চইক্যাবিলে মথৈই মারমা, জোগ্য মারমা, রাঙ্গাপানিতে মালিহা গার্ডেন, কুমারীতে লেমুয়া গার্ডেন ও সুখী এ্যাগ্রো ফার্ম (বারোমাসি কাটিমন) রয়েছে। আর মাঝারী ও ছোট বাগান রয়েছে অন্তত শয়ের কাছাকাছি।

কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিনুর রহমান জানান, পাহাড়ি এলাকার আম রসে, স্বাদে মন ছুঁয়ে যায়। বিশেষ করে আম্রপালির স্বাদ আলাদা। ফলে দিন দিন খাগড়াছড়ির সর্বত্র আম সৃজনে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে বাগান মালিকেরা। গত দুই বছর ধরে মানিকছড়িতে বারোমাসি কাটিমন আম চাষ প্রথম সৃজন করে চমক দেখিয়েছেন সুখী এগ্রো ফার্ম। এখন বাটনাতলী এলাকায়ও কাটিমন আম চাষ করেছেন একাধিক ব্যক্তি। সারা বছর কম-বেশি কাটিমন আম বাজারজাতে বাগান মালিক যেমন একদিকে লাভবান। তেমনি বাজারের চাহিদাও প্রচুর। যদিও কাটিমন আম আনসৃজনে দাম বেশি (কেজি ৪০০টাকা)। তিনি বাগান মালিকদের উদ্দেশ্য বলেন, এবার অনেকটা আগে-বাগে গাছে মুকুল এসেছে প্রচুর। ফলে পরিচর্চায় ভূল করলে ফলন বিপর্যয় হবে। তাই আমের মুকুলের শত্রু হপার পোকা আক্রমণ থেকে বাঁচাতে হলে, ইমিডা ক্লোরোপিট, প্রতি লিটার পানিতে ১মিলি বা আধা মিলি ঔষুধ মিশিশে ছিটাতে হবে। পাশাপাশি ছত্রাক নাশক (ম্যানকোজেব)ছিটালে আরও ভালো গাছে মুকুল আসা থেকে ফল পর্যন্ত কমপক্ষে ৭ বার ঔষধ দিতে হবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.