প্রকাশ: ২০২১-০৪-২৫ ১৮:৪৮:৫৬ || আপডেট: ২০২১-০৪-২৫ ১৮:৪৯:০৩
পানছড়ি প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কয়েক রকমের কচু চাষ হয়। তবে গত এক দশকে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার হাত ধরে বিকশিত হয়েছে কচুমুখী বা ছড়া কচু। তারই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্ত উপজেলা পানছড়িতে অনাবাদি পাহাড়ি পতিত জমিতে কচু চাষীরা জমি তৈরী ও কচু বীজ বপনে ব্যস্ত সময় পার করছে।
৬০ উর্ধ্ব কৃষক সুলতান মিয়া জানান, প্রতি কানি (৪০ শতক) জমিতে কেজি বীজ কচু ছড়া লাগাতে হয়। পাহাড়ি জমিতে হাল চাষ হয় না, তাই দৈনিক মজুর দিয়ে কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে জমি তৈরী করন, চারা গজানোর পর গাছের গোড়ায় মাটি ও সার বিষ প্রয়োগ মিলিয়ে প্রতি কানিতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয় ফলন ভালো হলে কানি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ মন ছড়া কচু উত্তোলন সম্ভব। আবহাওয়া ও যোগাযোগর সাথে বাজার দর ভালো হলে দামেও ভালো পাওয়া যায়। এতে ৬ মাসের কষ্টের হাসিটা হাসতে পারি। এটি সমতলেও জন্মে তবে পাহাড়ের ঢালু জমিতে কচু চাষ করে সফল হয়েছে জেলার চাষীরা।
জেলার পানছড়ি, মাটিরাঙা ,মানিকছড়ি, রামগড়, গুইমারায় কচুমুখী আবাদ বেশি। পাহাড়ের মাটির উর্বরতা কারণে এই কচুর ফলন ভালো। পাহাড়ে যে কচুমুখী চাষাবাদ হয় তা সমতলের তুলনায় বড় ও মানে উৎকৃষ্ট।
পাহাড়ের স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা মিটিয়ে এই কচু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম মজুমদার জানান, কচুমুখী লাগানোর প্রায় ৬ মাস পর ফলন পাওয়া যায়। পাহাড়ের ঢালু অংশে এর আবাদ করা হয়। গাছের গোড়া থেকে গুঁড়িকন্দ থেকে উৎপন্ন হয়। খাগড়াছড়ির সব উপজেলাতেই মুখী কচুর চাষ হয়। চৈত্র মাসের শুরুতেই পাহাড়ের আগাছা পরিস্কার করে মাটি কুপিয়ে চাষ যোগ্য করে তোলা হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম বৃষ্টি হলেই মাটিতে কচুর বীজ বপন করা হয় সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে মুখী কচু জমি থেকে উত্তোলন ও বিক্রি শুরু হয়। প্রতিটি এলাকায় উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের কৃষক/চাষীদের প্রতিটি ফসলের সঠিক পরামর্শ দেওয়ার জন্য মাঠে থেকে কাজ করছে।
স্থানীয়রা কৃষকরা জানান,‘ মৌসুমে ধান ও অন্যান্য সবজি চাষের পাশাপাশি খাগড়াছড়িতে কয়েক হাজার কৃষক পাহাড়ের ঢালুতে কচুমুখী চাষ করছে। এতে অনেকে আর্থিক সচ্ছলতা পেয়েছে। পানছড়ি উপজেলার লোগাং,পুজগাং,ছনটিলা,দমদম, ফাতেমা নগর, কাশিপাড়া,মদন কার্বারী পাড়া,,পাইয়ং পাড়া, মরাটিলা, এলাকায় কচুমুখী চাষী রিপন ত্রিপুরা,কালা চাকমা,সজল চাকমা, ফারুক হোসেন ও মো. শফিকুল ইসলাম সহ অনেকের সাথে আলাপকালে জানায়, অন্যান্য ফসলের তুলনায় কচুমুখী চাষে আয় বেশি। ছোট পাহাড়ের টিলায় এর ফলন বেশি হয়। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন কচুমুখী চাষের পরিধি বাড়ছে। কচু চাষে লাভও বেশি। এতে পোকার আক্রমণ কম তাই উৎপাদন ব্যয় বেশ সাশ্রয়ী।তাই পতিত পাহাড়ে কচু চাষে আগ্রহ বেশী। কচু চাষী ও মৌসুমি ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর মৌসুমে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন হাট থেকে কচুমুখী কিনে ঢাকা চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। পাহাড়ের কচু তুলনামূলকে স্বাদ ও মানে ভালো। তাই এর কদরও বেশি। পোকা ও রোগবালাই তেমন না থাকায় খরচ কম সে কারনেই স্থানীয় কৃষক কচুমুখী চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
পানছড়ি উপজেলা উপ সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা অরুনাংকর চাকমা জানান, কচু চাষে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বাণিজ্যিকভাবে সম্ভাবনায় হওয়ায় কচু চাষের প্রবণতা বাড়ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের কারিগরী পরামর্শ দেওয়া হয়।