প্রকাশ: ২০২২-০১-০৯ ১৬:৩০:৪৬ || আপডেট: ২০২২-০১-০৯ ১৬:৩০:৫২
এম.এ.রহমান সীমান্ত, উখিয়া কক্সবাজারঃ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী এলাকার শীর্ষ ইয়াবা সম্রাট, কথিত যুবদল নেতা, সদ্য জেল ফেরত জকিরার মিথ্যা মামলা-হামলায় হয়রানী, প্রতিনিয়ত অপহরণ করে জানে মেরে লাশ গুম করার হুমকিতে তটস্থ খোদ জকিরার প্রথম স্ত্রীর ঘরের স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তানও। নিজেদের জীবন জীবিকা রক্ষা ও স্কুলে নির্বিঘ্ন যাতায়াতের জন্য প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
স্থানীয় সুত্র ও ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১৪ সাল পর্যন্ত জকিরা সৌদি প্রবাসে ছিল। সৌদি প্রবাসে থাকাবস্থায় ভুয়া একামা, গাড়ীর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রসেসিং করতে গিয়ে সৌদি আরবে ধরা পড়ে ১বছর ১৮ দিন জেল খেটে বেরিয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে চলে আসে খালি হাতে। ১ম স্ত্রী এনজিওকর্মী শামীমা সোলতানা জীবিকার তাগিদে বেকার স্বামী জকিরাকে গ্রামীনব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, আশা ব্যাংক থেকে ৫/৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কিস্তিতে একটি পিকআপ ক্রয় করে দেয়। কিন্তু জকির আহমদ ব্যাংক ও গাড়ীর কিস্তির টাকা পরিশোধে গড়িমসি করে। উল্টো গাড়ী নিয়ে ইয়াবা পাচারে জড়ায়। সৌদি আরবে থাকা ২য় স্ত্রী শরীফার সাথে যোগাযোগ করে চলে, কুতুপালং ক্যাম্পে ইয়াছমিন নামক আরেক মহিলার সাথে গোপনে বিয়ে করে। পাশাপাশি উখিয়ার রাজাপালং ইউপির দরগাহ বিলের ঠান্ডা মিয়ার স্বামী পরিত্যক্ত কন্যা শাহানারা কে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিয়ে বহিভুর্ত বসবাস করে আসছিল।
এ নিয়ে প্রথম স্ত্রী শামীমা সোলতানার সাথে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। বিভিন সময় ইয়াবা পাচার করার জন্য শামীমা সোলতানাকে প্রস্তাব দিতো। প্রত্যাখান করাই প্রায়শঃ মারধর করতো জকিরা। স্থানীয় ভাবে শালিস বিচারে জকিরা স্ত্রী কে মারধর করবেনা মর্মে অঙ্গিকার করলেও তা মানতোনা। জকিরার শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন, একাধিক বিয়ে, বহুগামী চলাফেরা এবং ঋনের কিস্তি, গাড়ী কিস্তির টাকা আদায় নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে ২০২১ সালের ১২ মার্চ আইনী প্রক্রিয়ায় তালাক সম্পাদন করে ১ম স্ত্রী শামীমা সোলতানা। এর পরপরই জকির আহমদ তার পূর্বের পরকিয়া প্রেমিকা শাহানারা কে বিয়ে করে ঘরে তুলে। ওই ঘরে জকিরার এক পুত্র সন্তান রয়েছে। সৌদিতে ২য় স্ত্রী শরীফার আরোয়া নামের ১০ বছরের এক কন্যা সন্তান আছে। ৪ স্ত্রীর মধ্যে ৩ স্ত্রীর ৪ সন্তান রয়েছে। ১ম স্ত্রী শামীমা সোলতানার ঘরে ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মায়মুনা মারুয়া জীমা(১৩) আফনান সাইদ(৪) নামের দুই সন্তান আছে।তারা তালাকের পর মাতা শামীমা সোলতানার সাথে রয়েছে। তালাকের পর গত ২ বছরে সন্তানদের জন্য একটি পয়সাও ভরণপোষণ দেয়নি।
এদিকে তালাক হওয়ার পর থেকেই ১ম স্ত্রী শামীমা সোলতানা, শামীমার মাতা মনোয়ারা বেগম ও ভাই ওমর ফারুক আরাফাতের নামে অভিযোগ সহ অন্তত ১১ টি মামলা দায়ের করে। যা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। শুধু ইয়াবার কালো টাকার জোরে এসব মামলা দায়ের করে। এরি মধ্যেই ২০২১ সালের ২৭ জুলাই জকির আহমদ ৯২০০ পিস ইয়াবা নিয়ে ৪র্থ স্ত্রী শাহানারার আপন তালই, আরোও ২ আত্নীয়সহ ৫জন নোয়া গাড়ী নিয়ে র্যাব-১৫’র হাতে আটক হয়ে জেলে যায়। সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে ফের নানা হুমকি দিচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। Md Jahir Ahmed, Md Jahir সহ বিভিন্ন ফেসবুক আইডিতে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা আপলোড দিচ্ছে। তার ফেসবুক বন্ধুরে ম্যাসেঞ্জারে ১ম স্ত্রীর ছবি এডিট করে অশ্লীল কথাবার্তা বলছে। যা শামীমার হাতে এসেছে। আইনী আশ্রয় গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
১ম স্ত্রীর ঘরে থাকা জকির আহমদের ১ম কন্যা মায়মুনা মারুয়া জীমা(১৩) দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলেছেন, আমি ৭ম শ্রেণিতে কুতুপালং হাইস্কুলে পড়ি। আমার বাবা জকির আহমদ ইয়াবা ব্যবসা করে। দাদা ছৈয়দ আলম, দাদী সোনামেহের, চাচা জসিম ও ফুফু জোসনা আকতারের সহযোগিতায় আমার বাবা ইয়াবা পাচার সহ নানা খারাপ কাজে জড়িয়েছে। আগে থেকেই আমার মাকে ঠিকমত বাজার দিতনা। ব্যাংকের কিস্তি, গাড়ী কিস্তি দিতনা। প্রায় সময় মারধর করতো। মায়ের চাকরীর বেতনের টাকায় আমাদের বড় করেছে। বাবা কে নিয়ে দেওয়া লাখ-লাখ টাকা শোধ করার পরও অনেকেই মা’র কাছ থেকে টাকা পাবে। বাবার দেওয়া মিথ্যা মামলায় লাখ-লাখ টাকা খরচের কারণে কর্জ আছে। বাবা কোনদিন একটা টাকাও দেয়নি। বাবা ইয়াবা নিয়ে জেলে পড়ে, স্কুলে গেলে আমার সহপাঠিরা ইয়াবা বিয়ারীর মেয়ে বলে তিরস্কার করতো। তাই মায়ের কাছেই নিরাপদ আছি। বাবা জেল থেকে বের হয়ে আমাকে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণ করবে লোকজন মারফত হুমকি দিতেছে।
আমার ছোট ভাই আফনান কে মেরে ফেলতে চাইছিল। আমাদেরকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলবে। আম্মাকে ফাঁসাবে। এমন হুমকিতে আমি স্কুল যেতে পারছিনা, ভাইও যেতে চায়না। মায়ের ভাড়া বাসায় উখিয়ায় বন্দী আছি ভয়ে। বাবা জকিরা ধরে নিয়ে মেরে ফেলবে। আমি আইনের সহযোগিতা চাই। আমি স্কুলে যেতে চাই। আমি কোন দিন বাবা জকির আহমদের কাছে যাবোনা।গেলে আমাকে মারধর করতো। সৎ মা শাহানারা, দাদী, দাদা ও ফুফুরা মারধর করে। নানা কথাবার্তা বলে অপমান করতো।
জকির আহমদের তালাক প্রাপ্তা ১ম স্ত্রী শামীমা সোলতানা অভিযোগ করে বলেন, জকিরার পুরো পরিবার ইয়াবা কারবারি। ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে তার ভাই জসিম, বাবা ছৈয়দ আলম, মাতা সোনা মেহের, বোন জোসনা আকতার বেপরোয়া। তাদের কারণে আমার সংসার তছনছ। তারা জকিরাকে একাধিক বিয়ে করিয়েছে। জকিরার যেকোন খারাপ কাজে আর্থিক যোগান দিয়ে আশ্রয়-প্রশ্রয়, দিতো। জকিরার, বাবা ছৈয়দ আলম ও মাতা সোনামেহের আমাকে ইয়াবা পাচারের জন্য বলতো। বলতো ধারদেনা আছে, সহজেই শোধ করতে পারবি। সংসারে অভাব থাকবেনা। আমি না করে দিই। আমি ইয়াবা পাচারে সহযোগিতা করিনাই বলে, জকিরা একাধিক বিয়ে, বিভিন্ন নারী নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করতো, ব্যাংক কিস্তি, গাড়ীর কিস্তি দিতোনা। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ পারিবারিক কলহে অতিষ্ঠ ছিলাম। আইনী প্রক্রিয়ায় তালাক হয়েছে। এরপর ইয়াবার কালো টাকার জোরে বহু মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে। আমার চাকরীর টাকায় আমার নামে কেনা ৬ শতক জমি জোরপূর্বক দখলে রেখেছে। ইয়াবা নিয়ে ধরা খেয়ে জেলে ছিল জকিরা। মোটাংকের কন্ট্রাকে জামিনে বেরিয়ে আমাকে ও আমার সন্তানদের মেরে ফেলার হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।রাত-বিরাতে বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল করে গালিগালাজ করছে, কুরুচিপূর্ণ কথা বলছে। পাশাপাশি তার ইয়াবার সহযোগীদের নাম্বার দিয়ে বিরক্ত করাচ্ছে।
বান্দরবান কোর্টের একটি মামলার রায়ে জকিরার ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকার জরিমানা ঘোষিত হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর বান্দরবান কোর্টের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদুল আলম শিকদার এ রায় ঘোষণা করেন। মামলা নং-জিআর ২০২/১৭। জকিরা পলাতক থেকে ইয়াবা পাচারে সক্রিয় রয়েছে। তার ইয়াবা কারবারে বাবা, মা’র সহযোগিতা আছে। শুরু থেকেই ভাই জসিম, নাইক্ষ্যংছড়ির এক বিএনপি নেতা, ঘুমধুমের কয়েকজন যুবদল নেতা, উখিয়ার কয়েকজন সাংবাদিক, প্রশাসনের কয়েকজন নিয়মিত সহযোগিতা করতো। নিয়মিত বাড়িতে এসে টাকা নিয়ে যেতো। এখনও তারা সক্রিয় আছে জকিরার পক্ষে।
জকিরার চট্টগ্রামে থাকা ভাই জসিমের বাসায়, উখিয়ার হলদিয়ার ক্লাসাপাড়ায় ভগ্নিপতি আবদুল্লাহর বাসায়, ৪র্থ স্ত্রী শাহানারার পৈত্রিক বাড়ি রাজাপালংয়ের দরগাহ বিলের ঠান্ডা মিয়ার বাসায়, কোটবাজারের ইয়াবা কারবারি জনৈক ছেয়ইদ্যার বাসায়, ঘুমধুমের পাহাড় পাড়ার ভাই জসিমের খামার বাড়িতে ও বাবা ছৈয়দ আলমের বাড়িতে আড়ালে থেকেই ইয়াবা পাচার করছে। কালো টাকার, জোরে বার-বার আমাকে ও আমার সন্তানদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। শ্রীগ্রই আইনী আশ্রয় গ্রহণ করবো বলে সাংবাদিকদের জানান।